আজকাল চারপাশে সনাতন দর্শনের মূর্তি পুজা নিয়ে ভয়ংকর রকম অপপ্রচার চলছে।।
তারা বেদ, গীতার কিছু মন্ত্র ও শ্লোকের খন্ডিত অংশের অপব্যাখ্যা দিয়ে এহেন অপপ্রচারের মাধ্যমে সহজ সরল সনাতনী ভাইবোনদের বিভ্রান্ত করে ধর্মান্তরিত করে চলছে। সম্প্রতি তাদের সাথে হাত মিলিয়েছে আমাদের সমাজেরই কিছু বিপথগামী কদাচারী।
তাহাদের অপব্যাখ্যার মূল অস্ত্র (কুপ্রচার) কি?
“ন তস্য প্রতিমা অস্তি” (যজুর্বেদ ৩২/৩)
অর্থাৎ ঈশ্বরের কোন মূর্তি নেই।
“যারা নিজের বিবেক বুদ্ধি হারিয়েছে তাঁরাই মূর্তি পুজা করে।” (শ্রীমদভগবদগীতা ৭/২০)
বেদের ব্রহ্মসূত্রে আছে “একম ব্রহ্মা দ্বৈত্য নাস্তি নহিনা নাস্তি কিঞ্চন” অর্থাৎ ঈশ্বর এক তার মত কেউ নেই। আরও আছে “সে একজন তারই উপসনা কর।” (ঋগবেদ ২/৪৫/১৬)
“একম এবম অদ্বৈতম” অর্থাৎ সে একজন তাঁর মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই। (ঋগবেদ ১/২/৩)
“একজনেই বিশ্ব প্রভু” (ঋগবেদ ১০/১২১/৩)
” হিন্দুধর্মে মূর্তি পুজা নিষিদ্ধ” (শ্রীমদভগবদগীতা ৭/২০)
“তারা হচ্ছে বস্তুবাদি লোক, তারা উপদেবতার উপাসনা করে, তাই তারা সত্যিকার স্রষ্টার উপাসনা করে না। (শ্রীমদভগবদগীতা ১০/৩)
“তারা অন্ধকারে পতিত হয়ে যারা সম্ভুতি/প্রকৃতির পুজা করে, অধিকতর অন্ধকারে পতিত হয় যারা মূর্তি পুজা করে।” (যজুর্বেদ ৪০/৯)
“ঈশ্বরের কোন দেহ নেই, তিনি নিরাকার” (যজুর্বেদ ৪০/৮)/
প্রথম প্রশ্নের উত্তরঃ
“ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদ্ যশঃ।হিরন্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা
যস্মান্ন জাত ইত্যেষঃ।।
সরলার্থঃ সেই পরমাত্মার মহিমা বর্নিত হিরন্যগর্ভ, যস্মান্ত জাতঃ(যা থেকে ইন্দ্রাদি জাত,অর্থাৎ সমস্ত কিছুর সম্রাট) তথা মা মাহিংসীত(আমাকে হিংসা কর না) আদি মন্ত্রে করা হয়েছে যাহার নাম এবং যশ অত্যন্ত বড় পরন্তু ওনার সমান প্রতিমান (ক্ষমতা ও গুণবিশিষ্ট বিশিষ্ট) কেউ নেই। – যজুর্বেদ (৩২/৩)
*অর্থাৎ মন্ত্রের তাৎপর্য হলো যে ঈশ্বরের কোন তুল্য নেই। ঈশ্বরের মূর্তি গড়া যাবে না এমন কোন নির্দেশনা এই মন্ত্রে নেই।।*
মূর্তি পূজাকে শিড়কতত্ত্বের সাথে তুলনা করা ভারতের একজন বিতর্কিত অহিন্দু ধর্মপ্রচারক যজুর্বেদ ৩২/৩ এর একটা মন্ত্র থেকে *”প্রতিমা”*শব্দটাকে খুব প্রাধান্য দেয়।
*/”ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহৎযশঃ।
হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা সস্মান্ন ইত্যেষ।।“
-শুক্ল যজুর্বেদ (৩২/৩)
*অর্থাৎ, তাঁর কোনো তুলনা নেই (শঙ্করভাষ্য), তাঁর মহৎ যশ আছে। তিনি হিরণ্যগর্ভ, তাঁর থেকে ইন্দ্র প্রভৃতি দেবতাগণ জাত, তিনি স্বরাট।
এখানে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখবেন এক্ষেত্রে প্রতিমা দিয়ে সমতুল্য বোঝানো হচ্ছে। প্রতিমা শব্দের উৎপত্তি প্রতিম্ থেকে যার অর্থ তুল্য বা মত। যেমনঃ- মাতৃপ্রতিম – মতৃতুল্য বা মায়ের ন্যায়, ভাতৃপ্রতিম- ভাইয়ের তুল্য বা ভাইয়ের মত বা ভাইয়ের ন্যায়।
*এখানে প্রতিমা ব্যবহৃত হয়েছে তুল্য বা সমতুল্য অর্থে*। তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। এই সুন্দর মন্ত্রের অর্থ বিকৃত করে ঐরূপ, “ঈশ্বরের প্রতিমা নেই” অর্থ করা হয়েছে।
প্রতিমা শব্দের অনুবাদ করলে বিভিন্ন অর্থ পাওয়া যায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত অধ্যাপক মনির উইলিয়ামস তাঁর অনুবাদ গ্রন্থে “প্রতিমা” এর অর্থ করেছেন ছবি, তুল্য, মূর্তি, প্রতীক, স্ট্যাচু ইত্যাদি করেছেন। এখন যজুর্বেদের ৩২/৩ মন্ত্রের অনুবাদ করতে গিয়ে প্রতিমা শব্দের অর্থ মূর্তিই কেন করতে হবে? শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৪/১৯ মন্ত্রেও প্রতিমাকে তুল্য (শঙ্করভাষ্য) হিসেবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বেদ ও উপনিষদের আরও অনেক মন্ত্রে ব্রহ্মের তুল্য কেউ (কেউ বলতে কিন্তু আলাদা সত্তা বুঝাচ্ছে, মূর্তি কিংবা প্রতীক নয়) নেই বলা হয়েছে প্রাসঙ্গিক কারণেই। এখন এই “প্রতিমা” শব্দটাকেই প্রাধান্য দিয়ে সেই বিতর্কিত ধর্ম প্রচারক সনাতন সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ মূর্তি পূজা ও মন্দিরসমূহকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে৷ আমাদের নিজেদের মধ্যেও কেউ কেউ একই পথ ধরতে চাচ্ছে। আচ্ছা যদি ধরেও নেই উনার কোন মূর্তি নেই কিন্তু তার মানে কি দাড়ায় যে মূর্তিতে তিনি নেই যেখানে তিনি সর্বব্যাপী!
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরঃ
গীতা ৭/২০-২২ শ্লোক তিনটা পড়লে উত্তরটা পরিস্কার হয়।।
(৭/২০) “কামৈস্তৈস্তৈর্হৃতজ্ঞানাঃ প্রপদ্যন্তেন্যদেবতাঃ৷ তং তং নিয়মমাস্থায় প্রকৃত্যা নিয়তাঃ স্বয়া৷৷”
অর্থ: যাদের মন জড়-কামনা বাসনা দ্বারা বিকৃত তারা অন্য দেব-দেবীর শরণাগত হয়ে এবং তাদের স্বীয় স্বভাব অনুসারে নিয়ম পালন করে দেবতাদের উপাসনা করে।
(৭/২১) “যো যো যাং যাং তনুং ভক্তঃ শ্রদ্ধয়ার্চিতুমিচ্ছতি৷
তস্য তস্যাচলাং শ্রদ্ধাং তামেব বিদধাম্যহম্৷৷
অর্থ: পরমাত্মারুপে আমি সকলের হৃদয়ে বিরাজ করি। যখন কেউ দেবতাদের পূজা করতে ইচ্ছা করে আমি তাদের শ্রদ্ধানুসারে সেই সেই দেবতাদের প্রতি ভক্তি বিধান করি।
(৭/২২) “স তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্তস্তস্যারাধনমীহতে৷
লভতে চ ততঃ কামান্ময়ৈব বিহিতান্ হি তান্৷৷
অর্থ: সেই ভক্ত শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে সেই দেবতার আরাধনা করেন এবং সেই দেবতার কাছ থেকে আমারই দ্বারা বিহিত কাম্য বস্তু লাভ করেন।
উপরোক্ত গীতার তিনটি শ্লোকের কোথাও কিন্তু মূর্তিপূজা নিয়ে কিচ্ছু বলা হয় নি। বরং এটা বলা হয়েছে যে দেবদেবীর (ঈশ্বরের বিভিন্ন বিভুতি) আরাধনা থেকে ঈশ্বরের (পরমতত্ত্ব) আরাধনা শ্রেষ্ঠ কারন তিনিই মূল। আমরা কোন কাম্যবস্তু লাভের আশায় দেবদেবীর আরাধনা করে যখন সেটা চাই তখন সেই কাম্যবস্তুটা কিন্তু মূলত ঈশ্বরের থেকেই প্রাপ্ত হই। তাই সরাসরি মূখ্যকে আরাধনা করাই উচিত। তবে দেবদেবীর আরাধনা করতে বা মূর্তিপূজা করতে না করা হয় নি কোথাও। সনাতন ধর্মে স্বর্গ নরক মুখ্য নয় বরং মোক্ষলাভই মুখ্য তাই মোক্ষের জন্য মুখ্য তথা মুলের (পরমাত্মা) সাধনা করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
তৃতীয় প্রশ্নের উত্তরঃ
বানোয়াট তথ্য
ব্রহ্ম সুত্র বেদের নয়। ব্রহ্ম সুত্র উপনিষদ দর্শনের ব্যাখ্যা।
*বানোয়াট তথ্যঃ*
“সে একজন তারই উপাসনা কর” (ঋগবেদ ২/৪৫/১৬)।
*জবাবঃ*
ঋগ্বেদের ২য় মন্ডলে আছেই ৪৩টা সূক্ত। সেখানে ৪৫ সূক্তের ১৬নং মন্ত্র কোথা থেকে আসলো??
*বানোয়াট তথ্যঃ
“একম এবম অদ্বৈত্তম”
অর্থাৎ সে একজন তাঁর মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই।
(ঋগবেদ ১/২/৩)
*জবাবঃ*
ঋগ্বেদের ১ম মন্ডলের ২য় সূক্তের ৩য় মন্ত্রে গিয়ে পাওয়া গেলো এই মন্ত্রটি,
ঋষি,মধুচ্ছন্দা, ছন্দ,গায়েত্রী।
“বয়ো তব প্রপৃঞ্চতী ধেনা জিগাতী দাশুষে।
উরুচী সোমপীতয়ে।।” (ঋগ্বেদ ১/২/৩)
অর্থঃ হে বায়ু, তোমার সোমগুণ প্রকাশক বাক্য সোম পানর্থে হব্যদাতা যজমানের নিকট আসছে,অনেকের নিকট আসছে। *সোমরস-এক ধরণের লতার রস, যা ঘৃতের মত দেবতাদের নিকট প্রিয় পানীয়।
বানোয়াট তথ্যঃ
“এক জনেই বিশ্বের প্রভু” (ঋকবেদ ১০/১২১/৩)
জবাবঃ
ঋগ্বেদের ১০ম মন্ডলের ১২১সূক্তের ৩য় মন্ত্রে গিয়ে পাওয়া যায় এই মন্ত্রটি, ঋষি-হিরণ্যগর্ভ। ছন্দ-ত্রিষ্টুপ্।
“যঃ প্রাণতো নিমিষতো মহিত্বৈক ইদ্রজা জগতো বভূব।
য ঈশে অস্য দ্বিপদশ্চতুষ্পদঃ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম।।”
(ঋগ্বেদ,১০/১২১/৩)
অর্থঃ যিনি নিজ মহিমা দ্বারা যাবতীয় দর্শননেন্দ্রিয়সম্পন্ন গতিশক্তিযুক্ত জীবদের অদ্বিতীয় রাজা হয়েছেন, যিনি এ সকল দ্বিপদ চতুষ্পদের প্রভু। আমরা উপসনায় কি নৈবেদ্য দেবো?
*চতুর্থ প্রশ্নের উত্তরঃ*
এই প্রশ্নের উত্তর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে দেওয়া হয়েছে।
*পঞ্চম প্রশ্নের উত্তরঃ*
গীতার ১০/৩ এমন কোন শ্লোক নেই।।
(১০/৩) “যো মামজমনাদিং চ বেত্তি লোকমহেশ্বরম্৷
অসম্মূঢ়ঃ স মর্ত্যেষু সর্বপাপৈঃ প্রমুচ্যতে৷৷”/
অর্থ: যিনি আমাকে আদিহীন জন্মরহিত ও সর্বলোকের মহেশ্বর বলে জানেন, মানুষের মধ্যে তিনিই মোহশুন্য হন এবং সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন।
*ষষ্ঠ প্রশ্নের উত্তরঃ*
সম্ভুতি ও অসম্ভুতির তাৎপর্য না বুঝেই মূর্খের দল অন্ধকারের ব্যখ্যা দিচ্ছে।। প্রথমেই বলে রাখি এই অন্ধকার জ্ঞানের অন্ধকার।
যজুর্বেদ ৪০/৯ এ আছে, “যিনি কেবল মাত্র অসম্ভুতির(বিনাশ)এর উপাসনা করেন(সেই প্রবৃত্তি গুলোতেই আসক্ত) সে ঘোর অন্ধকার (অজ্ঞানতায়) পরিপূর্ণ হন।আর যিনি কেবল মাত্র সম্ভুতি(সংগঠন-সৃজন)এর উপাসনা করেন, সেও তেমন ভাবেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হন।”
[বেদমুনি রাম শর্মার ভাষ্য]
সম্ভুতি ও অসম্ভুতি এর ব্যাখ্যা ঋষি অরবিন্দের ব্যাখ্যাঃ
আত্মার দুইটি অবস্থা রয়েছে। একটা সর্বগত আরেকটি সর্বাতীত। আত্মার এই দুইটি অবস্থা আছে বলিয়াই মানবীয় চেতন সত্তার দুইটি ভাব দৃষ্ট হয়। *একটি জন্ম বা সম্ভুতি আরেকটি অজন্ম বা অসম্ভুতি। *মানুষ জন্মের বিক্ষুব্ধ অবস্থা হইতেই যাত্রা করে এবং ক্রমে সে এই গতি হইতে মুক্ত হইয়া চেতন সত্তার যে নিষ্ক্রিয় শান্ত অবস্থা তাহাতেই পৌছায়-ইহাই অসম্ভুতি। প্রকৃতিতে জন্মের গ্রন্থি হইতেছে অহংজ্ঞান। এই অহংজ্ঞান বিনস্ট হইলে মানুষ অসম্ভুতি অবস্থা প্রাপ্ত হয়। এই কারনে অসম্ভুতিকে বলা হয়েছে বিনাশ।
শ্রীপাদ রামানুজাচার্য এর ব্যাখ্যায় বলেছেন,
*সম্ভূতি শব্দের অর্থ সমাধি।* সমাধি লাভ করিতে হইলে মান, দম্ভ, হিংসা প্রভৃতি যে সকল বস্তু বর্জ্জন করিতে হয় *সেই সকল নিষিদ্ধ বস্তু হইতে নিবৃত্তির নাম অসম্ভূতি।* যাহারা কেবল মাত্র এই সকল নিষিদ্ধ বস্তু বর্জ্জন করিবার সাধনা করিয়া থাকে তাহারা মোক্ষলাভ করিতে পারে না, অজ্ঞানে নিমগ্ন থাকে। আবার যাহারা এই সকল নিষিদ্ধ বস্তু ত্যাগ না করিয়া কেবল সমাধির সাধনা করে তাহারা আরও অন্ধকারে যায়।
সপ্তম প্রশ্নের উত্তরঃ
জগতে নিরাকারবাদী বহু সম্প্রদায় আছে, যাহারা অবতারবাদ মানেন না এবং উপসনা কিংবা সাধণার জন্য কোনরূপ সাকার বিগ্রহ বা প্রতীকের প্রয়োজন হয় না৷ অনেকে আবার নিরাকারবাদ গ্রহণ করেও অবস্থাবিশেষে প্রতীকের *(অউম, ধর্মচক্র, স্টার অফ ডেবিড) *আবশ্যকতা স্বীকার করে। তাঁরা ঈশ্বরের বাহ্যিক মূর্তি স্বীকার করেন না কিন্তু তাঁরাও মনে মনে কোন না কোন মূর্তি কল্পনা করে থাকেন অথবা হৃদাকাশে কোন প্রতীকের কল্পনা করেন। মানুষের ব্রহ্মজ্ঞান না হওয়া অব্দি নামরূপের অতীত কোন অতীন্দ্রিয় বস্তুর ধারণাও করতে পারে না, সুতরাং যে পর্যন্ত না সাধক প্রকৃতির অতীত হয়ে অতীন্দ্রিয় তত্ত্বজ্ঞান লাভ করে ব্রহ্মপ্রাপ্তী হচ্ছে সে পর্যন্ত তাকে বা তাদেরকে সাকার প্রকৃতির মধ্য দিয়েই যেতে হবে, স্থুলের মধ্য দিয়েই তাকে সূক্ষ্মে যেতে হবে, অন্য কোন গতি নাই (স্বঘোষিত হয়ে সত্য স্বীকার না করলে ভিন্ন কথা)।
এই বিষয়ে স্বামী বিবেকানন্দ একটা কথা বলেছিলেন,
*”দুই প্রকার মানুষের রুপ-কল্পনার বা মূর্তির প্রয়ােজন হয় না -যে ধর্মের কোন ধার ধারে না; আর সিদ্ধপুরুষের, যিনি এই-সকল অবস্থার মধ্য দিয়া গিয়াছেন। আমরা এই দুই অবস্থার মধ্যে রহিয়াছি। ভিতরে ও বাহিরে আমাদের কোন-না-কোনরুপে আদর্শ বা মূর্তির প্রয়ােজন—উহা কোন পরলােকগত মানুষের হইতে পারে, অথবা কোন জীবিত নর বা নারীর হইতে পারে। ইহা ব্যক্তিত্বের উপাসনা—শরীর-কেন্দ্রিক, তবে ইহা খুব স্বাভাবিক। সূক্ষ্মকে স্থূলে পরিণত করার দিকে আমাদের ঝোঁক। সূক্ষ্ম হইতে যদি আমরা স্থূল না হইয়া থাকি, তবে কিভাবে এখানে আসিলাম? আমরা স্থূল ভাবপ্রাপ্ত আত্মা, এইভাবেই আমরা এই পৃথিবীতে আসিয়াছি। সুতরাং মূর্তি ভাব যেমন আমাদিগকে এখানে আনিয়াছে, তেমনি মূর্তির সাহায্যেই আমরা ইহার বাহিরে যাইব। ইহা হােমিওপ্যাথিক চিকিৎসার সদৃশবিধানের মতো—বিষস্য বিষমৌষধম’
নিজের মনকে স্থির করে কোন বিষয়ে নিয়ে চিন্তা করলেও দেখা যায় যে মনের মধ্যে কোন মূর্তি গঠন না করে থাকা যাচ্ছে না। *ঈশোপনিষদের ৪ নং মন্ত্রে* যেমন ব্যাখ্যা করা হয়েছে মন যখন কোন জায়গার কথা কল্পনা করে তখন সেখানে আগেই আত্মা উপস্থিত থাকে অর্থাৎ সেই জায়গার একটা প্রতিরূপ মনের পর্দায় ভেসে উঠে। এখানে সাকারবাদীর সাথে পার্থক্য হচ্ছে সাকারবাদী নিজের চিন্তাশীল মন দিয়ে একটা বাহ্যমূর্তি তৈরী করে কিন্তু নিরাকারবাদীরা সেটা মনেই রাখে। আরেকটা পার্থক্যও আছে সেটা হলো সাকারবাদীরা কখনোই নিরাকারবাদীকে বাতিল ঘোষণা করে না কিন্তু নিরাকারবাদীরা দম্ভভরে সাকারবাদীদের ভ্রান্ত বলে ঘোষণা করে।
ঈশ্বর নিরাকার মানে কোন আকার নেই এমন নয় বরং নিরাকার মানে নির্দিষ্ট কোন আকার নেই। কোন আকার নেই মানে ত কোন অস্তিত্বই নেই করে ফেলা হচ্ছে৷ যেমন আমরা যদি বলি ব্রহ্ম শূণ্যেও আছে আবার মহাশূন্যেও আছে। এখন কি বলা হবে শূণ্য ত জিরো, শূন্য হাত মানে ত হাতে কিছুই নেই৷ এখন যদি শূন্যকে একটু বিশাল করি তবে ত সেটা মহাশূন্য (Space) হয়ে যাবে। এই মহাশূন্যের বিশালতা পরিমাপ করা যাবে? শূন্য যদি আসলে শূণ্য (Zero) হত তাহলে মহাশূন্য (Space) কিভাবে হলো? আসলে এই ব্রহ্মের আকার অসীম যার আদি মধ্য অন্ত কিছুই দেখা যায় না। জড় চোখ দিয়ে তো একদমই নয়, দিব্যচোখ দিয়েও এই অসীম আকারের পরিমাপ সম্ভব না। মহাভারতের অর্জুন দিব্যচোখ নিয়েও পরমেশ্বরের বিশ্বরূপের আদি অন্ত মধ্য কিছুই খুজে পায় নি৷ এটাই ঈশ্বরের নিরাকারতত্ব। *এখন যদি কেউ নিরাকারকে “কোন আকারই নেই” মনে করে কিংবা শূন্যকে কেবল জিরোই মনে করে তবে সেটা তার নিজের উপলব্ধি, সেটা সকলের উপর চাপিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। অন্যধর্মের লোকজন ইদানীং বেদের দুইটা মন্ত্র থেকে দুইটা স্পেসিফিক শব্দকে কোট করে বলতে চায় বেদে মূর্তি পূজা নিষিদ্ধ৷
প্রথমত বেদের কোন মন্ত্রে সরাসরি মূর্তি পূজার প্রসঙ্গই নেই তাহলে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গই বা কিভাবে এলো?
দ্বিতীয়ত মন্ত্র দুইটি থেকে দুইটি স্পেসিফিক শব্দের ভিন্ন অর্থ করে নেওয়া হয়েছে।
একটু ব্যাখ্যা করি বিষয়টা।
যজুর্বেদের ৪০/৮ নং মন্ত্র থেকে নিরাকার শব্দ বলা হয় যেখানে ঈশ্বরেকে বলা হয়েছে ‘অকায়ম্’। অকায়ম্ শব্দটা সংস্কৃত শব্দ। অকায়ম্ অর্থ কি? যার কায়া নেই। কায়া অর্থ কি? শরীর। শরীর জড় বস্তু, আমরা স্বরূপত আত্মা। আত্মা এক জড় শরীর থেকে আরেক জড়শরীরে ভ্রমণ করে বেড়ায় মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত। এখানে অকায়ম্ বলে বোঝানো হয়েছে ঈশ্বরের জীবের ন্যায় এরূপ জড় শরীর নেই। তিনি এমন জীবের মত কায়াধারী নয়। তিনি তার নিজ স্বরূপেই ঈশ্বর, যেটাকে পরমেশ্বরের জ্যোতির্ময় শরীর বলে। এখন আকায়ম্ মানে যদি সেই তথাকথিত নিরাকারই (কোন আকারই নেই) তাহলে বেদে পরমেশ্বরের সচিদানন্দ জ্যোতির্ময় স্বরূপের ব্যাখ্যা থাকত না।
মূর্তি মূর্তি করে আমরা আসলে মূর্তিকেই প্রাধান্য দেই। তাই ত স্বামীজি বলেছেন, *”যে – কোন বস্তুর ভিতর ঈশ্বর দর্শন করিয়া তাঁহাকে উপাসনা করিতে পারেন। মূর্তি ভুলিয়া সেখানে ঈশ্বরকে দেখুন। ঈশ্বরে অন্য কিছু আরোপ করিবেন না, কিন্তু যে – কোন বস্তুতে ইচ্ছা ঈশ্বরভাব প্রবেশ করান। যে সাকার মূর্তিটি উপাসনা করেন, তাহার মধ্যে ঈশ্বরকে সীমাবদ্ধ করিবেন না।বরং যাহা কিছু উপাসনা করেন, সেই সবকিছু ঈশ্বরভাবে পূর্ণ করিয়া দিন। “(বানী ও রচনা, চতুর্থ খন্ড,পৃষ্ঠা-১১২)
★একেশ্বরবাদী, বহুশ্বরবাদ, নিরাকারবাদ, সাকারবাদ ও মূর্তিপূজা নিয়ে ধূম্রজাল কেন?
যারা একেশ্বরবাদ ও নিরাকারবাদের প্রচার করে তারা সাকারবাদীদের বহু উপাসককিংবা পৌত্তিলক বলে নিন্দা করে। বেদে কতিপয় দেবতার কথা বলা আছে এমনকি পরমেশ্বরেরও বিভিন্ন গুণবাচক নাম বলা আছে। কিন্তু সকলই ত এক এবং বহুত্বের কল্পনামাত্র৷ এই সকল দেবতা সকলে ত এক পরমেশ্বরেরই অনুপ্রকাশ। তাই দেবতারা ঈশ্বর নয় বরং ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণ ও শক্তির প্রকাশ বা বিভূতি। আমরা ঈশ্বরের সেই বিভূতির প্রশংসা করি, সম্মান করি ও কৃতজ্ঞচিত্তে পূজা করি। আবার কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত ভয়ে, বিস্ময়ে কিংবা স্বার্থবুদ্ধিতেও দেবতার পূজা করে। কিন্তু ভুল করেও সেই অনাদি পরমেশ্বরকে অস্বীকার করি না কেউই৷
দেবতাদের সাকার রূপের ব্যাখ্যা কি?
মহর্ষি যাস্কপ্রণীতম নিরুক্তমের দৈবতকান্ডের সপ্তমাধ্যয়ের দ্বিতীয় পাদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। “চন্দ্র-সূর্য-অগ্নি প্রভৃতি যেসকল জড়বস্তু আমরা আমাদের স্থূল চক্ষুর দ্বারা দেখতে পাচ্ছি তাকে ‘অপুরুষবিধ’ দেবতা এবং ঐসকল নামে উহার অধিষ্ঠাত্রী যে শরীরধারী চেতন দেবতা আছে তাঁকে ‘পুরুষবিধ’ দেবতা বলে নিরুক্তাকার মহর্ষি যাস্ক সংজ্ঞায়িত করেছেন ৷
ব্রহ্মসূত্র ১/৩/২৬,
“তদুপর্য্যপি বাদরায়ণঃ সম্ভবাৎ।
অর্থাৎ, মহর্ষি বাদরায়ণ ব্যাসদেব বলেন—
মানুষের উপরিবর্তী দেবতাদেরও ব্রহ্মবিদ্যায় অধিকার আছে।
দৃষ্টান্তস্বরূপ, ছান্দোগ্য উপনিষদে (৮/১১/৩) দেখা যায় যে ইন্দ্র একশত এক বছর প্রজাপতির সমীপে ব্রহ্মচর্য পালন করেন ৷ তাহারপর প্রজাপতি ইন্দ্রকে ব্রহ্মবিদ্যার উপদেশ দেন ৷ ব্রহ্মচর্য অনুশীলন, ব্রহ্মবিদ্যা শিক্ষা গ্রহণ, ব্রহ্ম উপসনা শরীর ব্যতীত সম্ভব হয়না ৷ অতএব, স্বীকার করতে হয় যে দেবতাগণ শরীরী ৷ কিন্তু এ বিষয়ে আপত্তি এই যে, মানুষেরা একই সময়ে বিভিন্ন স্থানে একই দেবতার উদ্দেশ্যে যজ্ঞানুষ্ঠানে সেই দেবতাকে আহ্বান করতে পারেন ৷ দেবতা শরীরধারী হলে কি করে একই সময়ে বিভিন্ন যজ্ঞে সশরীরে উপস্থিত হতে পারেন?
এ আপত্তির উত্তর পরবর্তী সূত্রে—
ব্রহ্মসূত্র ১/৩/২৭,
“বিরোধঃ কর্ম্মণীতি চেন্নানেকপ্রতিপত্তের্দ্দর্শনাৎ।।
অর্থাৎ, দেবতাগণের একই সময়ে অনেক দেহ ধারণের ক্ষমতা আছে ৷ এজন্য একই সময়ে বিভিন্ন যজ্ঞে উপস্থিত হওয়াতে বিরোধ হয়না।
যখন ব্রাহ্মণবেশী অগ্নিদেব খান্ডববন দহনের সিদ্ধান্ত করেন, সেস্থলে ব্যাসদেব অগ্নিদেবের রুপের বর্ণনা করেছেন—”তাঁহার শরীরটি বিশাল শাল-বৃক্ষের ন্যায় দীর্ঘ, তাঁহার বর্ণ উত্তপ্ত স্বর্ণের তুল্য, শ্মশ্রুগুলি পিঙ্গলবর্ণ ও উজ্জ্বল, তাঁহার শরীরটি যেমন দীর্ঘ তেমন স্থূল; আর তিনি নবোদিত সূর্যের ন্যায় তেজস্বী, কৌপিন ও জটাধারী এবং পিঙ্গলবর্ণ তেজ দ্বারা যেন জ্বলিতেছিলেন; আর তাঁহার নয়নযুগল পদ্মপত্রের ন্যায় সুন্দর ছিল ৷ (আদিপর্ব ২১৫/৩৪-৩৫, হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ অনুদিত)
পরমেশ্বর ও তার অনুপ্রকাশ দেবতাদের বিভিন্ন স্বরূপের বর্ণনা বেদ ও উপনিষদে পাওয়া যায়।
বৃহদারণ্যক উপনিষদের ২/৪/৬ মন্ত্রে বলা হয়েছে,
“এই পুরুষের রূপ হরিদ্রারঞ্জিত বরসনের মতো পীতবর্ণ, ইন্দ্রগোপ কীটের মত রক্তবর্ণ; অগ্নিশিখার মত, শ্বেত-পান্ডুর মতো শ্বেত পদ্মের মতো এবং চমকিত বিদ্যুতের মত।”
ঋগ্বেদ-১০/৯০/১ মন্ত্রে বলা হয়েছে,
“পরম-পুরুষের সহস্র মস্তক, সহস্র নয়ন ও সহস্র চরণ। তিনি সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে পরিব্যপ্ত হয়ে, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অতীত ও সকল জাগতিক হিসাব নিকাশ পরিমাপের অতীত হয়েও জীব হৃদয়ে অবস্থান করেন।”
ঋগবেদ- ১/২৫/১৩ এর মন্ত্রে বলা হয়েছে,
“বরুণ সুবর্ণের পরিচ্ছদ ধারণ করে আপন পুষ্ট শরীর আচ্ছাদন করেন, হিরণ্যস্পর্শী রশ্মি চারদিকে বিস্তৃত হয়।”
ঋগবেদ-২/৩৩/১০ এর মন্ত্রে বলা হয়েছে,
“হে অর্চনাহ! তুমি ধনুর্ধারী; হে অর্চনাহ! তুমি নানা রূপ বিশিষ্ট ও পূজনীয় নিষ্ক ধারণ করেছ; হে অর্চনাহ! তুমি সমস্ত বিস্তীর্ণ জগৎকে রক্ষা করছ, তোমা অপেক্ষা অধিক বলবান আর কেউ নাই।”
বেদ ও উপনিষদে পরমেশ্বর ও তাঁর অনুপ্রকাশ দেবতাদের বিভিন্ন স্তুতি কিংবা প্রশংসাও আছে,
“যামিষুং গিরিশন্ত হস্তে বিভর্ষ্যস্তমে ৷
শিবাং গিরিত্র তাং কুরু মা হিংসীঃ পুরুষং জগৎ ৷৷
অর্থাৎ, হে গিরিশ, শত্রুর প্রতি নিক্ষেপের জন্য হস্তে যে বাণ ধারণ করেছ, হে প্রাণিগণের ত্রাতা, তা কল্যাণকর কর, পুরুষ ও জগতের হিংসা করো না। (যজুর্বেদ ১৬/৩, শ্বেতাশ্বতর ৩/৬)
“অজাত ইত্যেবং কশ্চিদ্ভীরুঃ প্রতিপদ্যতে।
রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যং।
অর্থাৎ, তোমাকে অজাত জেনে কেহ তোমার কাছে আসে আর তার চিত্ত ভয়ব্যাকুল হয় ৷ হে রুদ্র, হে ভীষণ, তোমার সেই যে অন্য হাস্যময় প্রসন্ন মুখমন্ডল, তার মধুর হাসি দিয়ে তুমি আমায় রক্ষা কর সর্বদা ৷ (শ্বেতাশ্বতর ৪/২১)
বেদে ঈশ্বরের এইসকল অনুপ্রকাশ দেবতাদের প্রশংসা ও স্তুতিকে মূল্যায়ন করা হয়েছে, */”ত্রয়স্ত্রিং শতাস্তুবত ভূতান্য শাম্যন্ প্রজাপতিঃ। পরমেষ্ঠ্যধিপতিরাসীৎ।
– যজুর্বেদ (১৪/৩১) (অনুবাদকঃ দীনবন্ধু বেদশাস্ত্রী)
অনুবাদঃ যাঁহার প্রভাবে গতিশীল প্রকৃতি শান্ত হয় যিনি প্রজাপালক আকাশে ব্যাপক পরমেশ্বর অধিষ্ঠাতা তাঁহার মহাভূতের তেত্রিশ গুণের (অন্তুবত) কীর্ত্তণ কর।।
অজ্ঞতাবশত যাহারা ভয়ে ও স্বার্থবুদ্ধি নিয়ে দেবতার পূজা করে তারা ইষ্টলাভ করলেও লাভ করে না বরং পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হয় ৷ কিন্তু যারা কেবল শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা থেকেই দেবতার পূজা করে তারা ইহাকে ঈশ্বরের বিভূতি ভেবেই করে কারণ তারা জানে ঈশ্বর হতে পৃথক অন্যকোনো শক্তি নেই৷
ঈশ্বরের সাকাররূপও চিন্তা করা যায় ঠিক আছে তাহলে সেই স্বরূপের মূর্তি বানাইয়া পূজা করার কি দরকার?
আগুন দেখতে হলে যেমন কোন একটি অবলম্বনের প্রয়জন ঠিক তেমনই ঈশ্বর দর্শনের হেতু কোন একটি অবলম্বন হলে অনেকের জন্য বিষয়টা সহজ হয়। মনের মধ্যে পরমেশ্বরের কোন রূপকে যদি কেউ মূর্তির রূপ দেয় তাহলে আপত্তি কোথায়?
উপনিষদের একটা মন্ত্রে বলা হয়েছ,
“ব্রহ্ম মানুষের হৃদকুঠুরে চৈতন্যরূপে সর্বদা অভিব্যক্ত আছেন। তাই এই হৃদপিন্ডকে বলা হয় ব্রহ্মপুর। এই ব্রহ্মপুরে যে বিশাল শুণ্যস্থান আছে সেটাই হৃদাকাশ। এই হৃদাকাশেই যোগীগন আত্মাকে জ্যোতিরূপে উপলব্ধি করেন। হৃদাকাশ ভিন্ন এই অনন্ত, অনাদি ও সর্বব্যাপী ব্রহ্মকে আর কোথায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব?” -মুণ্ডকোপনিষদ (২/২/৩৯)
এখন এই হৃদাকাশকে তুলনা করি একটা কলসের সাথে আর ঈশ্বর হচ্ছেন নিরাকার জল তবে আমি আমার হৃদয়ে পরমাত্মার যে রূপ কল্পনা করব তিনি ত সেই রূপেই অধীষ্ঠিত হবে৷ নিরাকার কাকে বলব? নিরাকার মানে কি এমন কিছু যেটার অস্তিত্বই নেই? কোনকিছুর অস্তিত্ব আছে মানে ত তাঁর একটা স্বরূপ ত আছে। আমার হৃদাকাশে সেই অনন্ত পরমাত্মার একটা স্বরূপ যদি আমি কল্পনা করি তবে কি আমি পাপের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাব?
ফুল ত সাকার কিন্তু ফুলের গন্ধ নিরাকার পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের ভুবনভোলানো সেই বাঁশি তো সাকার কিন্তু বাঁশির সেই সুর নিরাকার এই জগতে সাকার নিরাকার একে অপরের পরিপূরক৷ পরমেশ্বর কত কিছুই নিরাকার সৃষ্টি করেছেন এই জগতে যেগুলোর সাকাররূপও বিদ্যমান তবে
তিনি নিজে সাকার হলেই জগৎ ধ্বংস?
পরিশেষে এটাই বলব যে সনাতন দর্শন অজ্ঞানীদের কাছেই কখনোই বোধগম্য নয়।