সনাতন ধর্ম সনাতনী শাস্ত্রের বিধি এবং নিষেধের উপর দন্ডায়মান।আজকাল কিছু শাস্ত্রজ্ঞানহীন ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে সনাতন ধর্মে নাকি মাছ মাংস খেতে কোথাও নিরুৎসাহিত করা হয় নি,বরং যারা আমিষাহার করছে তারা ভূল পথে আছে। যা হোক তাদের এই প্রচার যে শতভাগ শাস্ত্রসিদ্ধান্ত বিরুদ্ধ অথাৎ মিথ্যাচার, তা আমরা এই লেখার মাধ্যমে উপস্থাপন করব।

সনাতনী শাস্ত্রে অথাৎ সনাতন ধর্মে মনুষ্য জাতির জন্য সংঙ্কুচিত চেতনাধারী প্রাণী অথাৎ ছাগল,ভেড়া,
মুরগী,কবুতর,মাছ ইত্যাদির প্রতি হিংসা বা তাদের হত্যা করে তাদের মাংস আহার করাকে মহাপাপ রুপে নির্দেশ করা হয়েছে। কেননা আমাদের আঘাত করলে বা কেউ আমাদেরকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা হত্যা করলে আমরা যেমন ভীষণ কষ্ট অনুভব করি ঠিক তেমনই তারাও কষ্ট অনুভব করে।তাই নিজের জিহ্বা তৃপ্তির জন্য আমাদের কখনো নিরহ ছাগল,ভেড়া,মুরগি, কবুতর, মাছ ইত্যাদি প্রাণীদের হত্যা করে তাদের মাংস আহার করা উচিত নয়।
আর তাছাড়া সৃষ্টিকর্তা কতৃর্ক সৃষ্ট মানুষের দাঁত এবং তাঁর খাদ্য প্রকৃিয়া, পরিপাকতন্ত্র বাঘ,সিংহ,
কুকুর ইত্যাদি মাংসাশী প্রাণীদের মতো নয়; বরং তৃণভোজী গরু,ছাগল,ভেড়া ইত্যাদি প্রাণীদের সাথে তুলনীয়।তাই সনাতনী শাস্ত্রে মনুষ্যজাতির আহাররুপে মাছ মাংস আহার করাকে পাপাহার বলা হয়েছে অথাৎ মাছ মাংস আহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।
সভ্যদেশরুপে বাংলাদেশে যেমন সর্বত্র মদ খাওয়া, বিবাহবহির্ভূত অবৈধ স্ত্রীসঙ্গকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু তার পরেও কিছু কিছু উচ্ছৃঙ্খল জনসাধারণ যাদের মদ খাওয়া,বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ স্ত্রীসঙ্গ করা তা নেশাতে পরিণত হয়েছে, তারা যাতে সর্বত্র এ ধরনের নেশার মাধ্যমে পরিবেশকে দূষিত করতে না পারে সেজন্য সরকার নিদিষ্ট কিছু দামী হোটেলে মদ খাওয়া, অবৈধ স্ত্রীসঙ্গ বা বেশ্যাবৃত্তিকে অনুমোদন করেন,ঠিক তেমনই সনাতনী বেদ,স্মৃতি,
অষ্টাদশ পুরাণ,রামায়ন,মহাভারত,পঞ্চরাত্র ইত্যাদি শাস্ত্রে স্পষ্টভাবে নিজের জিহ্বা তৃপ্তির জন্য অসহায় পশুকে হত্যা করে তাদের মাংস আহার করাকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও কিছু মানুষ শাস্ত্রের এই বচন শুনবে না।তাই কিছু তমোগুণময়ী তন্ত্র এবং পুরাণ বিশেষ করে কালিকা পুরাণে শুধুমাত্র অমাবশ্যা তিথিতে কালিকা দেবীকে সাক্ষী রেখে পশু বলি দিয়ে তার মাংস আহার করার বিধান দেয়া হয়েছে,যাতে করে জনসাধারণ নিজের জিহ্বা তৃপ্তির জন্য যখন তখন পশুকে হত্যা করে তার মাংস ভক্ষণ না করে।এইভাবে সনাতনী শাস্ত্রে পশুমাংস ভক্ষনকে মহাপাপরুপে সীমাবদ্ধ করে মনুষ্য সমাজকে মাংস আহার থেকে বিরত হতে শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে।
বেদ, মনুসংহিতা,শ্রীমদ্ভাগবত, মহাভারত ইত্যাদি বিভিন্ন সনাতনী শাস্ত্রে জ্ঞানী অথাৎ যারা এই জগতে সুখি, নিরোগী (রোগমুক্ত) থাকতে চান এবং এই দুঃখময় জগত থেকে মুক্ত হয়ে চিন্ময় জগত ভগবদ্ধামে ফিরে যেতে ইচ্ছা করেন তাদের কথা বলা হয়েছে, যারা কখনো ছাগল,ভেড়া,হরিণ,মুরগী, কবুতর ইত্যাদি অসহায় প্রাণীকে হত্যা করে নিজের জিহ্বা তৃপ্তির জন্য নিজ মাংস সমতুল্য পশু মাংস আহার করে মহাপাপের প্রভাবে পুনরায় নারকীয় পশুদেহ প্রাপ্তির কথা চিন্তা করবে না।বরং তারা শাক-সবজি,বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু ফল,অন্ন,রুটি,দুগ্ধজাত সকল ধরনের খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি নিরামিষ খাবার, যে খাবারের চেতনা হল আচ্ছাদিত বা ঢাকা অথাৎ দুঃখানুভূতিহীন,যা শাস্ত্রে মনুষ্য জাতির জন্য আহার্য হিসেবে অনুমোদন করা হয়েছে তা রান্না করে যজ্ঞেশ্বর পরমাত্মা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করে আহার করে জীবন ধারন করবেন (গীতা ৯/২৬,৯/২৭)।
সমুৎপত্তিঞ্চ মাংসস্য বধবন্ধৌ চ দেহিনাম্।
প্রসমীক্ষ্য নিবর্তেত সর্বমাংসস্য ভক্ষণাৎ।। ৪৯।।
– (মনুসংহিতা৫/৪৯)
অনুবাদঃ মাংসের উৎপত্তির কথা বিবেচনা করে এবং মাংস লাভ করতে গেলে কিভাবে প্রাণিগণকে বধ ও বন্ধন করতে হয়- সে সব পর্যালোচনা করে জ্ঞানী ব্যক্তিরা বিহিত মাংসের ভোজন থেকেও নিবৃত্ত হন, অবৈধ মাংসের তো কথাই নেই।সুতরাং শাস্ত্রবিহিত এবং শাস্ত্রবিরুদ্ধ উভয়প্রকার মাংস পরিত্যাজ্য।
যোহহিংসকানি ভূতানি হিনস্ত্যাত্মসুখেচ্ছয়া।
স জীবংশ্চ মৃতশ্চৈব ন ক্বচিৎ সুখমেধতে।। ৪৫।।
-(মনুসংহিতা৫/৪৫)
অনুবাদঃ যে লোক নিজের সুখের জন্য হিংসাদিরহিত হরিণ প্রভৃতি পশুকে হত্যা করে, সে জীবিতাবস্থায় বা মৃত্যুর পরে অর্থাৎ কোনও অবস্থাতেই সুখলাভ করে না।
যো বন্ধনবধক্লেশান্ প্রাণিনাং ন চিকীর্ষতি।
স সর্বস্য হিতপ্রেন্সঃ সুখমত্যন্তমশ্নুতে।। ৪৬।।
-(মনুসংহিতা৫/৪৬)
অনুবাদঃ যে লোক কোনও জীবকেই বন্ধন অথবা বধজনিত ক্লেশ দিতে ইচ্ছা না করেন, তিনি সকলেরই হিত অভিলাষী; এমন লোক চিরকাল অনন্ত সুখ ভোগ করেন।
৪/ যদ্ধ্যায়তি যৎকুরুতে ধৃতিং বধ্নাতি যত্র চ।
তদবাপ্নোত্যযত্নেন যো হিনস্তি ন কিঞ্চন।। ৪৭।।
-(মনুসংহিতা৫/৪৭)
অনুবাদঃ যে ব্যক্তি (পশু-পাখি,কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি) কোনও জীবের প্রতি হিংসা পোষণ করে না, সে যা কিছু ধর্মের অনুষ্ঠান করে, এবং সে যে পরমার্থতত্ত্বের অনুসন্ধানে মনোনিবেশ করে, সে সবই অনায়াসে লাভ করে থাকে।
৫/ নাকৃত্বা প্রাণিনাং হিংসাং মাংসমুৎপদ্যতে ক্বচিৎ।
ন চ প্রাণিবধঃ স্বর্গ্যস্তস্মান্মাংসং বিবর্জয়েৎ।।৪৮।।
-(মনুসংহিতা৫/৪৮)
অনুবাদঃ প্রাণি-হিংসা না করলে মাংস উৎপন্ন হয় না; কিন্তু প্রাণি-বধ স্বর্গজনক নয় (অর্থাৎ নরকবাসের কারণ)। অতএব মাংস ভোজন করবে না।
ন ভক্ষয়তি যো মাংসং বিধিং হিত্বা পিশাচবৎ।
স লোকে প্রিয়তাং যাতি ব্যাধিভিশ্চ ন পীড্যতে।।৫০।।
-(মনুসংহিতা৫/৫০)
অনুবাদঃ যিনি শাস্ত্রের বিধান ত্যাগ করে পিশাচের মতো মাংস ভক্ষণ করেন না, তিনি জনসমাজে প্রীতির পাত্র হন এবং কোনও ব্যাধিও তাঁকে পীড়া দেয় না।
অনুমন্তা বিশসিতা নিহন্তা ক্রয়বিক্রয়ী।
সংস্কর্তা চোপহর্তা চ খাদকশ্চেতি ঘাতকাঃ।।৫১।।
-(মনুসংহিতা৫/৫১)
অনুবাদঃ যিনি পশুবধ করতে অনুমতি দেন, যিনি অস্ত্রাদির দ্বারা পশুর অঙ্গপ্রতঙ্গ খণ্ড খণ্ড করেন, যিনি পণ্ড বধ করেন, যিনি সেই প্রাণীর মাংস ক্রয় করেন, যিনি তা বিক্রয় করেন, যিনি মাংস পাক করেন, যিনি পরিবেশন করেন, এবং যিনি মাংস ভক্ষণ করেন-তাঁরা সকলেই সেই পশুর ‘ঘাতক’ অথাৎ মহাপাপী রূপে অভিহিত হন।
স্বমাংসং পরমাংসেন যো বর্দ্ধয়িতুমিচ্ছতি।
অনভ্য্য পিতৃন দেবান্ ততোংন্যো নাস্ত্যপুণ্যকৃৎ।। ৫২।।
-(মনুসংহিতা৫/৫২)
অনুবাদঃ যে লোক পিতৃলোক ও দেবলোকের অর্চনা না করে অন্য প্রাণীর মাংসের দ্বারা নিজ দেহের মাংস বৃদ্ধি করতে ইচ্ছা করে, জগতে তার তুলনায় অপুণ্যকারী বা পাপী আর কেউ নেই।
বর্ষে বর্ষেহশ্বমেধেন যো যজেত শতং সমাঃ।
মাংসানি চ ন খাদেদ যস্তয়োঃ পুণ্যফলং সমম্।।৫৩।।
-(মনুসংহিতা৫/৫৩)
অনুবাদঃ যে লোক একশ বৎসর কাল প্রত্যেক বৎসরে অশ্বমেধ যজ্ঞ করে এবং যে লোক যাবজ্জীবন মাংস ভক্ষণ করে না, তাদের দুজনেরই স্বর্গাদি পূণ্যফল সমান।
ফলমূলাশনৈর্মেধ্যৈমূন্যন্নানাঞ্চ ভোজনৈঃ।।
ন তৎফলমবাপ্নোতি যন্মাংসপরিবর্জনাৎ।। ৫৪।।
-(মনুসংহিতা৫/৫৪)
অনুবাদঃ গৃহবাসীগণ মাংস ভক্ষণ না করলে যেমন ধর্ম সঞ্চয় করতে পারেন,পবিত্র ফল-মূল ভোজন এবং মেধা [অর্থাৎ দেবতাকে নিবেদনের যোগ্য] ও মুনিগণ-সেবিত নীবারাদি অন্ন ভোজনের দ্বারা সেরকম মহাফল লাভ করা যায় না।
মাং স ভক্ষয়িতামুত্র যস্য মাংসমিহাদ্ম্যহম্।
এতন্মাংসস্য মাংসত্বং প্রবদন্তি মনীষিণঃ।। ৫৫।।
-(মনুসংহিতা৫/৫৫)
অনুবাদঃ আমি ইহলোকে অথাৎ এই মনুষ্যজীবনে যার মাংস ভোজন করছি, পরলোকে বা মৃত্যুর পর ‘মাং= আমাকে, সঃ ‘= সে’ ভক্ষণ করবে”-পণ্ডিতেরা মাংস-শব্দের অর্থ এরুপ প্রতিপন্ন করেছেন।(অথাৎ আমি যদি এই জীবনে পশু হত্যা করে তার মাংস খায় তাহলে এই জীবনের পরে নিশ্চিত সে মানুষের দেহ লাভ করবে আর আমি একটি পশুদেহ লাভ করব তখন সে আমাকে হত্যা করে খাবে।)।
যো যস্য মাংসমশ্লানি স তন্মাংসাদ উচ্যতে।
মৎস্যাদঃ সর্বমাংসাদস্তস্মান্মৎস্যান্ বিবর্জয়েৎ।। ১৫।।
-(মনুসংহিতা ৫/১৫)
অনুবাদঃ যে যার মাংস খায় তাকে ‘তন্মাংসাদ’ অর্থাৎ তার মাংসভোজী বলে (যেমন বিড়াল ইঁদুরের মাংস খায়, তাই বিড়াল ‘মুষিকাদ’, নকুল অর্থাৎ বেজী ‘সর্পাদ’); কিন্তু যে ‘মৎস্যাদ’ অর্থাৎ মৎস্যভোজী, তাকে সর্বমাংসভোজী বলা চলে। (এমন কি তাকে ‘গো-মাংসদ’ও বলা যায়)। অতএব মৎস্য-ভোজনে যখন ভীষণ পাপ হয়, তখন তা পরিত্যাগ করবে।
ইজ্যাযজ্ঞশ্রুতিকৃতৈর্যৌ মার্গৈরবুধোহধমঃ।
হন্যাজ্জন্তুন্ মাংসগৃধ্নুঃ স বৈ নরকভাঙনরঃ।।৪৩।।
-(মহাভারতঃ অনুশাসন পর্ব ১১৫ / ৪৩)
অনুবাদঃ যেসকল মাংসলোভী মূর্খ ও অধম মনুষ্য যজ্ঞ-যাগ প্রভৃতি বৈদিক মার্গের নামে প্রাণীদের হিংসা করে, তাহারা নরকগামী হয়।
পূর্বং তু মনসা ত্যক্তা তথা বাচাখ কর্মী।
ন ভক্ষতি যো মাংসং ত্রিবিধং স বিমুচ্যতে ॥
-(মহাভারতঃঅনুশাসন পর্ব, ১০০/১৯)
অনুবাদঃ ধার্মিক লোক প্রথমে মন(চিন্তা) দ্বারা, পরে বাক্য দ্বারা, তৎপরে দেহ (কর্ম) দ্বারা হিংসা ত্যাগ করে থাকেন। এই তিন প্রকারে যিনি মাংস ভক্ষণ বর্জন করেন, তিনি মুক্ত হন।
মাসি মাস্যশ্বমেধেন যো যজেত শতং সমাঃ ।
ন খাদতি চ যাে মাংসং সমমেতন্মতং মম ॥
-(মহাভারতঃ অনুশাসন পর্ব, ১০০/৪৫)
অনুবাদঃ ভীষ্মদেব বললেন — যিনি শত বছর যাবৎ প্রত্যেক মাসে অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন , আর যিনি মাংস ভক্ষণ করেন না -এই দুইজনই সমান পুণ্যবান(অথাৎ স্বর্গসহ উচ্চাদি লোক প্রাপ্তির উত্তম অধিকারী), এটিই আমার মত।
অথবা মাসমেকং বৈ সর্বমাংসান্যভক্ষয়ন।
অতীত্য সর্বদুঃখানি সুখং জীবেন্নিরাময়ঃ ॥
বর্জ্জয়ন্তি হি মাংসানি মাসশঃ পক্ষশােহপি বা।
তেষাং হিংসানিবৃত্তানাং ব্ৰহ্মলােকো বিধীয়তে ॥
-(মহাভারতঃ অনুশাসন পর্ব,১০০/৯৪,৯৫)
অনুবাদঃ যে সমস্ত মানুষ কার্তিক, মাঘ ও বৈশাখের এক মাস সমস্ত মাংস পরিত্যাগ করেন, তারা সকল দুঃখ অতিক্রমপূৰ্ব্বক নিরাময় হয়ে সুখে জীবনযাপন করেন।যারা মাসে মাসে ও পক্ষে পক্ষে মাংস বর্জন করেন, হিংসা হতে নিবৃত্ত সেই সজ্জনদের জন্য ব্ৰহ্মলােক নির্দিষ্ট থাকে।
যেত্বনেবংবিদোহসন্তঃ স্তব্ধাঃ সদভিমানিনঃ ।
পশূন্ দ্রুহ্যন্তি বিশ্রদ্ধাঃ প্রেত্য খাদন্তি তে চ তান্ ॥ ১৪ ॥
-(শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ১১/৫/১৪)
অনুবাদঃযে সমস্ত পাপাচারী মানুষ যথার্থ ধর্মনীতি বিষয়ে অজ্ঞ হলেও নিজেদের সম্পূর্ণ ধার্মিক মনে করে, তাই নির্বিচারে ঐ সব নিরীহ পশু যারা তাদের উপরে পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে থাকে, তাদের উপর হিংসাত্মক আচরণ করে থাকে। তাদের পরজন্মে, এই সমস্ত পাপাচারী মানুষগুলিকে এই পশুগুলিই আবার হত্যা করে ভক্ষণ করে থাকে।
দ্বিষন্তঃ পরকায়েযু স্বাত্মানং হরিমীশ্বরম।
মৃতকে সানুবন্ধেহস্মিন বদ্ধস্নেহাঃ পতন্ত্যধঃ।। ১৫
-(শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ১১/৫/১৫)
অনুবাদঃবদ্ধজীবগণ সুদৃঢ় স্নেহবন্ধনে তাদের নিজেদেরই মৃতদেহবৎ জড় শরীরটির সাথে এবং তাদের আত্মীয়স্বজন ও পরিবারবর্গের সাথে আবদ্ধ হয়ে থাকে। এই ধরনের মহানন্দময় এবং বুদ্ধিভ্রষ্ট অবস্থায়, বদ্ধ জীবগণ অন্য সকল অসহায় প্রানী, এমন কি সকল জীবের অন্তর্যামী পরমেশ্বর ভগবান শ্রীহরির প্রতিও ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠে। তার ফলে ঈর্ষাবশে সকলকে মনোকষ্ট দেওয়ার ফলে, বদ্ধজীবগণ ক্রমশই নরকে অধঃপতিত হতে থাকে।
প্রার্পায়াতু শ্রেষ্ঠতমায় কর্মন আপ্যাযদ্ধম… অঘ্ন্যা যজমানস্য পশুন্ পাহি।
-(শুক্ল যজুর্বেদ ১.১)
অনুবাদ-হে মনুষ্য, প্রার্থনা কর যাতে সবসময় তুমি মহত্ কার্যে নিজেকে উত্সর্গ করতে পার,পশুসমূহ অঘ্ন্যা অর্থাত্ হত্যার অযোগ্য,ওদের রক্ষা কর।
পশুমাংসাসবৈশ্চৈবমাসুরং ভাবমাশ্রিতাঃ।।৬৮
যে যজস্ত্যম্বিকাং তে স্যুর্দৈত্যা ঐশ্বর্য্যভোগিনঃ।
দেবত্বং সাত্ত্বিকা যান্তি সাত্ত্বিকীং ভক্তিমাস্থিতাঃ।।৬৯
-(স্কন্দ পুরাণঃপ্রভাসখন্ড,প্রভাসক্ষেত্রমাহাত্ম্যম ১১৯।৬৮-৬৯)
অনুবাদঃআসুরিক ভাবাপন্ন ব্যক্তিরা পশুমাংস ও মদ দিয়ে অম্বিকা-দেবীর অর্চ্চনা করেন, এরূপ তামসিক পূজার দরুন তারা ঐশ্বর্য্যভোগী দৈত্য হয়ে জন্মলাভ করে। অপরদিকে সাত্ত্বিক ব্যক্তিগণ সাত্ত্বিকভাবে দেবীর পূজা করে দেবত্ব লাভ করেন।
পরিশেষে উপরোক্ত শাস্ত্রীয় নির্দেশনায় মাছ -মাংস নয় বরং নিরামিষ শাক-সবজি এবং দুগ্ধজাতীয় ইত্যাদি খাবার হোক আমাদের নিত্যদিনের আহার্য।